ঢাকা জেলাধীন নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা কোকিলপ্যারী হাই স্কুল ১৯৩৬ সনের ১লা জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে। তখন এটি কলাকোপা কোকিলপ্যারী বহুমূখী ইংলিশ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।কলাকোপা অঞ্চলের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী স্বর্গীয় বাবু রাধারমন রায় তাঁর মাতা কোকিলপ্যারী রায়ের নামে স্কুলটি এলাকাবাসীর সহায়তায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি প্রায় ৬ একর সম্পত্তি স্কুলকে দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতা চলে যান।
শুরু থেকেই স্কুলটি অনন্য সাধারণ অবদান রেখে যাচ্ছে এই এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রে। বহু গুনীজন এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন।শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা,ও সংস্কৃতির সূতিকাগার ছিল কলাকোপা কোকিলপ্যারী হাই স্কুল। কমপক্ষে একডজন খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
অর্ধ ডজন শিক্ষার্থী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন ও এসএসসি পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
শুরুতে এ স্কুলের অবকাঠামো ছিল গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি দেড় তলা বিশিষ্ট টিন কাঠের সুরম্য একটি স্কুল গৃহ।যা দেখতে খুবই চমৎকার ছিল। এত সুন্দর টিন কাঠের তৈরি স্কুল অত্র এলাকায় দ্বিতীয়টি আর দেখা যায়নি। কালের পরিক্রমায় ঐ স্কুল ঘর একসময় বয়সের ভারে জর্জরিত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে।এমন একটি সময় ছিল আকাশে বৃষ্টি দেখা গেলেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হতো।
'৯০ এর দশক। তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মীর কাশেম ও কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং স্কুলে কর্মরত এলাকার কিছু শিক্ষক মিলে এই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব কে.এস.আলম পোখরাজকে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নিয়ে আসেন।তাঁকে উপহার দেওয়া হয় স্বর্নের চাবি।সেই সাথে স্কুল অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনুরোধ করা হয়।আর তখনই পোখরাজ সাহেব বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় বাবু রাধারমন রায় ও তাঁর মাতা স্বর্গীয় কোকিলপ্যারী রায়ের দুটো ছবি স্কুলের সাবেক শিক্ষক বাবু রাধাশ্যামকে কলকাতা পাঠিয়ে স্কুলের অফিসকক্ষে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন।বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে টাঙানো রয়েছে।
আজকের মেহগনি গাছ লাগানো যতটুকু জায়গায় ততটুকুই ছিল স্কুল আঙিনা।কিন্তু পোখরাজ সাহেব বললেন "এতটুকু জায়গায় স্কুল হয় কি করে? "
তিনি বর্তমান আমেনা খাতুন একাডেমিক ভবন নিজ অর্থে সমাপ্ত করলেন। পাশাপাশি এখন যে বিশাল হলরুম সেটি স্কুলের এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত হলো।দাঁড়িয়ে গেল একটি বিশাল ক্যাম্পাস।কিন্তু জমি ছিল নিচু।সামনের পুকুর কেটে মাঠ ভরাট করা হলো।পুকুর থেকে মাটি কাটতে অনাকাঙ্ক্ষিত বাঁধার সম্মুখীন হলে পোখরাজ সাহেব তার সমুচিত ব্যবস্হা গ্রহণ করেন এবং সম্পূর্ণ পুকুরটি স্কুলের দখলে নিয়ে আসেন।যা আজ অবধি স্কুল ভোগ করছে।
এরপর পোখরাজ সাহেবের নেতৃত্বে এবং অর্থায়নে নির্মিত হয় বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে মূল ভবন ( দু'তলা ভবনের সিঁড়িসহ পূর্বাংশ) - যা বেগম হাসিবা একাডেমিক ভবন নামকরণ করা হয়েছে।উল্লেখ্য এই ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্হাপন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের তৎকালীন কনস্যুলার নাঈম হাসান কামেল খাজা। তারও আগে বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র জনাব মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। আর মূলভবন নির্মানকালীন সভাপতি ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান ও পুলিশের সাবেক এডিশনাল আইজিপি ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ড.মোঃসামছুদ্দোহা খন্দকার। মূলত তিনি সভাপতি থাকাকালীন পোখরাজ সাহেবকে দিয়ে বিদ্যালয়ের মূলভবন, বাউন্ডারি ওয়াল, গেইট এবং সার্বিক অবকাঠামোয় পরিপূর্ণতা আসেন। এছাড়া আজকে আমরা বিদ্যালয়ের পাশে যে মার্কেট দেখতে পাই তাও পোখরাজ সাহেব ওয়েজ আর্নাস কল্যান তহবিল থেকে বরাদ্দ এনে নির্মান করেছিলেন।পোখরাজ সাহেবের এহেন অবদানের কারণে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এক আদেশে তাঁকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
পরবর্তীতে জনাব কে. এস. আলম পোখরাজ স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং স্কুলের সামগ্রিক উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেন।উল্লেখ্য তাঁর এ অগ্রযাত্রায় যাদের সহযোগী হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম মরহুম খোন্দকার আবুল হাশেম, খন্দকার আবু আশফাক,খন্দকার আবুল হোসেন, মরহুম আতিয়ার রহমান, মরহুম কফিল উদ্দিন শিকদার, জনাব মোঃ আইউব,জনাব মোঃ ইসমাইল ভূঁইয়া, জনাব আঃ আলীসহ আরও অসংখ্য প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী,স্কুলের শুভাকাঙ্ক্ষী এলাকাবাসী, অভিভাবকবৃন্দ ও কমিটির সাবেক সদস্যবৃন্দ।
শিক্ষকগণের মধ্যে জনাব আঃ সালাম, জনাব শায়খুল ইসলাম খন্দকার, মরহুম আঃ মালেক চৌধুরী, বাবু অজিত কুমার সাহা, মল্লিক শফিউদ্দিনসহ আরও কর্মরত ও সাবেক অসংখ্য শিক্ষকমন্ডলী।
বর্তমানে বিদ্যালয়টি ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে।গত ১০ বৎসর যাবত পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
পরিশেষে স্কুলটি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মরহুম পোখরাজ সাহেবের একমাত্র সন্তান জনাব আদনান খন্দকারের নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ সদস্য। আশাকরি তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা, অভিভাবক, প্রাক্তন ছাত্র - ছাত্রীসহ সর্বোপরি এলাকাবাসী সকলে মিলে কলাকোপা অঞ্চলের একমাত্র গর্ব ও অহংকারের জায়গা কলাকোপা কোকিলপ্যারী হাইস্কুলকে একটি মডেল বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।